'একাল-সেকালঃ'- কিছু অজানা কথা
মাষ্টার এম, গিয়াস উদ্দিন (ব্যাচঃ ১৯৭৮)
মীরসরাই সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের জীবন সচেতন সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক মিঃ প্রবাল ভৌমিকের একটি লেখা 'একাল-সেকাল' প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে। এ লেখাটা আপাতঃ হাতেগোনা কিছু বাক্যের মধ্যে সীমিত বটে কিন্তু বাস্তব চিন্তার গভীরতা বিশাল ও বিস্তৃত। প্রতিটি ছাত্র- তরুণ এবং যুবসমাজ তাদের নিজ নিজ সর্বতোমুখী সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে এ লেখা আশাতীত প্রেরণ যোগাবে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। একজন ছাত্র-ছাত্রী কিভাবে কোন্ পদ্ধতি অনুসরণে মেধাবী ও সচেতন নাগরিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, তা এ লেখাটা পড়লে বোঝা যাবে। লেখকের জীবনে এ পর্যন্ত যে সফলতা তার প্রক্রিয়াগত নিয়মাবলী অতি সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় আলোচিত হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষাস্তরে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীকে মেধাবী ও সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ছাত্র-শিক্ষক এবং অভিভাবক এ তিনের বাস্তব পরিকল্পনা ও সমন্বয় থাকতেই হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। শিক্ষা বিকাশে এ তিনটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর মধ্যে কোন না কোন দুই/একটি উপাদান প্রায় অনুপস্থিত ছিলো, আছে এবং হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। আমি মনেকরি এটি প্রথম ও প্রধান সমস্যা যা ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পরিচ্ছন্ন শিক্ষা বিকাশে চরম অন্তরায়।
অপরদিকে, লেখকের আলোচনায় পরম যশ- খ্যাতিসম্পন্ন বিদ্বান লেখকের বিভিন্ন যে বইগুলোর নামোল্লেখ করা হয়েছে তা বর্তমানের ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকাংশ এগুলো পড়াতো দুরের কথা, অনেকেই হয়তো নামও জানে না। কিন্তু 'যত দোষ নন্দ ঘোষ।' শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতা আজ খুব বেশি প্রসারিত করা প্রয়োজন। জ্ঞানার্জণের নানামুখী বই পাঠের অভ্যাস ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে অত্যন্ত সুকৌশলে প্রবেশের দ্বারোম্নোচন করতেই হবে। লেখকের উল্লেখিত বইগুলোর মধ্যে আমি যদি কেবল একটিমাত্র বইয়ের ব্যাপারে অতি সংক্ষেপে আলোকপাত করি তাহলে সেটি হবে অমর সাহিত্যিক শরৎবাবুর সর্বাধিক আলোচিত উপন্যাস "দেবদাস"। আমাদের ছাত্রজীবনে এ বিখ্যাত উপন্যাস কেউ পড়েনি এ রকম ছাত্র-ছাত্রীর নাম আমার জানা নেই। পাঠ্য বইয়ের সাথে শরৎচন্দের এ বইটি প্রায় সবার সাথে দেখা যেতো। বরং দুই/তিনবার এ উপন্যাস পড়েছেন তাদের সংখ্যাই বেশি। এতে ছাত্র-তরুণ-যুবসমাজের মাঝে কী প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিলো তা আজ বর্তমানের শিক্ষার্থীরা বোঝা প্রয়োজন। তারা প্রত্যেকেই মানবপ্রেম তথা নর-নারীর হৃদয়ের সম্পর্কে ছিলো অত্যন্ত গভীর শ্রদ্ধাশীল, প্রেম যে একটি মহা পবিত্র বিষয়, যেকোন প্রকারে এর পবিত্রতা রক্ষা করা প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত হতো। ফলে রুচিহীন নোংরামি, আশ্লীল আচার- আচরণ, পথে-ঘাটে-রাস্তায় কিংবা পরিবহন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের প্রতি কোন অভদ্র কথাবার্তা ছিলো প্রায় শতভাগ অশোভনীয়। ধর্ষণের মতো পশুত্বের চিন্তাতো কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু আজকাল এসব হচ্ছে কী? শ্রীকান্ত প্রথম পর্বের ইন্দ্রনাথের সেই কালজয়ী বিখ্যাত উক্তি, "বড় প্রেম শুধু কাছে টানেনা তা দূরেও ঠেলে দেয়।" এ বাক্যটির ভাবার্থ সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারলে কেউ পশুর মতো আচরণ ও প্রতারণা করতে পারে না।
যাক, যা বলছিলাম এক কথায় সেটি হলো 'একাল-সেকাল' এ লেখাটি বর্তমানে অধ্যয়নরত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে একটি করে ছাপানো কপি বিতরণ করা প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের সামাজিক, গঠনমূলক কাজের একটি বিশেষ ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে আমার বিশ্বাস। এতে করে আমরা লেখকের চাইতেও আরো বেশি সচেতন ও মেধাবী শিক্ষার্থী পেতে পারি যা বর্তমানে আমাদের দেশ- সমাজ এবং জাতির সর্বতোমুখী উন্নয়নে একান্তভাবে প্রয়োজন। ধন্যবাদ 'একাল-সেকাল' এর লেখক মিঃ প্রবাল ভৌমিককে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাশিয়ার বিখ্যাত সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কীর "মা" উপন্যাস পড়ে আমাদের অনেক বন্ধুর সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি এবং অর্থনীতির চিন্তা- চেতনায় আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছিলো।
-----------------------------------------------------
মিঃ প্রবাল ভৌমিকের 'একাল-সেকাল' লেখাটি পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুণ-
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন