আদুভাই; দ্যা ফ্রিডম ফাইটার

মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জুবায়ের
৭ম শ্রেণি, মীরসরাই সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় 
গল্পটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ- আমরা প্রায় সবাই আদুভাই সম্পর্কে কম বেশি জানি। তাকে আমরা এক গল্পের মাধ্যমে চিনি। সে গল্পটিতে তার চরিত্র ছিল এক সাধারণ মানুষের। ঐ গল্পটিতে আদুভাই অনেক বড় ছিল এবং তার দাড়ি গোঁফও ছিল কিন্তু তবুও সে ক্লাস সেভেনে পড়ত। একসময় সে ক্লাস প্রমোশনের জন্য এত পড়ালেখা করে যে, তার মৃত্যু ঘটে। আমরা যারা আদুভাই সম্পর্কে জানি না তারা ক্লাস সেভেনের আনন্দ পাঠে গল্পটি পড়ে বুঝতে পারব। কিন্তু আমার এ গল্পটিতে আদুভাইয়ের চরিত্র এক মুক্তিযোদ্ধার, সংগ্রামী ব্যক্তির। আশাকরি, বন্ধুরা তোমাদের গল্পটি ভাল লাগবে। 
-------------

১.
তখন ১৯৫২ সাল। আদুভাইয়ের বয়স ৮ বছর। তখন সে ২য় শ্রেণিতে পড়ত। তখন একদিন ঢাকার সড়কে সে একটি ডাক শোনে; যেটি তার বুকের এক অস্ত্র মানবকে জাগিয়ে তোলে। সেটি হচ্ছে, “মাতৃভাষা বাংলা চাই।” সঙ্গে সঙ্গে আদুভাইয়ের সামনে এক ছাত্রকে পাকিস্তানি মিলিটারি গুলি করে মারে। রক্ত ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। আদুভাই তখন ভয় ও কষ্ট জর্জরিত বুকে সেখান থেকে পালিয়ে যায় কিন্তু তার ইচ্ছে হয় ঐ খুনিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার। কিন্তু ছোট তো, যুদ্ধ করবে কী করে? সেদিন সে সংগ্রাম করেনি কিন্তু তার মনে শুধু একটি ভাব জেগে উঠে; সেটি হচ্ছে, “আমি একদিন না একদিন লড়বো এবং আমি জিতবই।"

২.
সেই ২য় শ্রেণির আদুভাই আজ চাকুরীজীবি। আজ ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ অর্থাৎ আজ বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেবেন। তাই সবার মতো সেও ভাষণ শুনতে ছুটে আসে কর্মস্থলে না গিয়ে। ভাষণটি শুনে বুক ফেটে উঠল আদুভাইয়ের এবং মনে পড়ল তার ছোটবেলার শপথটি। এর কিছুদিন পর ২৫শে মার্চ রাতে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করা শুরু করল, শুরু করল নির্যাতন তখনই ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ল বীর বাঙালী। শুরু হল মুক্তিযুদ্ধ। তখন আদুভাইয়ের সংগ্রামী মনোভাব জেগে উঠল। গ্রামে গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা তৈরী করল ক্যাম্প। ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিলো আদুভাই। তখন ২২শে অক্টোবর ১৯৭১ সাল। তখন আদুভাই ও তার সহযোদ্ধারা গেল তার পাশের গ্রামকে শত্রু মুক্ত করতে। তখন আদুভাই হাতে রাইফেল নিয়ে ঝোঁপের ভেতর লুকিয়ে ছিল। এরপর শুরু হলো বন্দুকযুদ্ধ। আদুভাই খুবই সাহসের সাথে যুদ্ধ করতে লাগল। এরপর হঠাৎ যখন আদুভাইয়ের সহযোদ্ধার দিকে এক মিলিটারি গুলি ছুড়ল তখনি আদুভাই তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার পায়ে গুলিবিদ্ধ হল এবং আরেকটি গুলি এসে তার বুকে লাগল। যখন তার সব সহযোদ্ধারা মিলে তাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেল। তখন সে তার শেষ নিঃশ্বাসটুকু ত্যাগ করল। 

আদুভাই শহীদ হল, শহীদ হলো তার মাতৃভূমির জন্য, শহীদ হলো তার দেশের জন্য। এটি ছিল তার শেষ ইচ্ছা, আকাঙ্খা। 

এখনও তার কবরের পাশে লিখা আছে যে, HERE LIES ADU BHAI WHO WAS MARTYRED IN THE FREEDOM WAR OF BANGLADESH. 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

" বিজয় ও অভ্র " ----যাদের কল্যাণে আমরা বাংলায় কথা বলি

মা

প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের পথচলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ