গোয়েন্দা অনন্য
অনন্য নিলীম দে
৬ষ্ঠ শ্রেণি, মীরসরাই সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
একসময় এক ছেলে ছিল। তার নাম অনন্য । সে যখন ৯ম শ্রেনিতে পড়ে, তার দেখা হয় একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ গোয়েন্দার সাথে । সেই গোয়েন্দার নাম ছিল মারিয়ো জনসন । মারিয়ো জনসন বাংলাদেশে ঘুরতে এসেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, ঢাকা যাওয়ার পথে মিরসরাই নামক এক সুন্দর জায়গায় তিনি এক দূর্ঘটনার শিকার হন । তিনি যে গাড়িতে করে আসছিলেন, সেই গাড়িটি একটি বড় ট্রাকের ধাক্কায় পডে যায় এক খালে । অনন্য পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কেটে সেই গোয়েন্দা আর তার গাড়ি চালককে বাঁচায় । তারপর অনন্য তার বাড়িতে সেই গোয়েন্দা আর তার গাড়ি চালককে আশ্রয় দেয় এবং এক হাসপাতালে চিকিৎসা করায় । তারপর এক সপ্তাহ পর তারা দুইজন যখন সুস্থ হয় তখন অনন্য কে মারিয়ো জনসন জিজ্ঞেস করে -
তুমি কী চাও?
অনন্য বলে -
আমি একজন গোয়েন্দা হতে চাই।
মারিয়ো জনসন বললেন -
আজ থেকে তুমি আমার শিষ্য ।
তারপর অনন্যকে শিষ্য হিসেবে তিনি নিয়ে গেলেন তাঁর দেশ আমেরিকায়। তারপর তাকে আমেরিকার নিউ ইয়র্কে কঠোর প্রশিক্ষণ দিয়ে আবার ফেরত পাঠালেন বাংলাদেশে। দেশে ফিরে সে প্রথমে যোগ দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে। এরপর থেকে শুরু হয় তার গোয়েন্দা জীবন।
তার আজ ৩৮ বছর বয়স। তার এই বছরগুলোতে সে অনেক ঘটনার সামাধান করেছে। তার সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো বঙ্গোপসাগরের “নীল তিমি অভিযান”। এই কাহিনী তার জীবনে চিরস্মরণীয়। দিনটি ছিল ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি লঞ্চ গভীর সমুদ্রে যায় পরিদর্শন করার জন্য। লঞ্চ যখন গভীর সমুদ্রে, তখন দক্ষিণ দিক থেকে অনেক বাতাস বইছিল। ক্যাপ্টেন মনে মনে ভাবছিলেন, যদি একটা বড় বাতাস তাদের লঞ্চকে ধাক্কা দেয় তাহলে তাদের জাহাজ চালাতে কষ্ট হবে। যা ভয় ছিল, তাই ঘটে গেল। দক্ষিন দিক থেকে এক ঠান্ডা প্রকান্ড বাতাস তাদের লঞ্চকে ধাক্কা দেয়। ক্যাপ্টেন কিছু না করতে পেরে দ্রুত গতিতে চলে গেলেন সমুদ্রের আরো গভীরে। হঠাৎ পানিতে ঘূর্ণিঝড়ের মতো শুরু হলো। ক্যাপ্টেন লঞ্চকে সামলাতে পারছিলেন না। ঠিক তখনি পানি থেকে এক বিশাল বড় তিমি মাছ লঞ্চটাকে পানিতে ডুবিয়ে দিল। লঞ্চের প্রায় সকল যাত্রী হারিয়ে যায়। দুইজন লোক, যারা ঐ লঞ্চের মেথর, তাদের কাছে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম মনে হয়। তারা কোনরকমে একটা স্পিডবোর্ডের মাধ্যমে প্রাণে বেঁচে ফিরতে সক্ষম হয়। কিন্তু তারা তা বাংলাদেশ নৌবাহিনী বা সেনাবহিনীর কাউকে জানায় না। তাদের একজনের নাম সৃজন কচু আর আরেকজনের নাম শুভউদ্দিন খাঁজা।
একদিন তারা অনন্যকে অনেক সাহস নিয়ে সবকথা খুলে বলে। অনন্য ছোটবেলা থেকেই সাহসী ছিল। সে ভাবল, একটি অভিযান চালানো প্রয়োজন। সে এই কথা নৌবাহিনীকে জানায়। নৌবাহিনীর অফিসাররা এই কথা শুনে বিশ্বাস করে না, কিন্তু গোয়েন্দার কথা শুনে কী আর চুপ করে থাকা যায়? তাই তারা অনন্যকে জিজ্ঞেস করে, তারা কী করে ওখানে যাবে?
অনন্য বলে- আমরা সাবমেরিন করে যাবো।
অনন্যর কথা শুনে নৌবাহিনী সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা নেয়। সেখানে গিয়ে তাদের সাথেও একই ঘটনা ঘটে। নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলতে তাকে তাদের সাবমেরিন। অনেক কষ্টে তাদের ক্যাপ্টেন সাবমেরিন নিয়ন্ত্রনে রাখতে সক্ষম হয়। কিন্তু যখন তিমি ওদের সাবমেরিনকে একেবারে পানির গভীরে নিয়ে যায়, তিমিকে যখন অনন্য তাদের সাবমেরিনের জানালা দিয়ে দেখে, তখন অনন্য’র মনে হয়, ওটা কোন তিমি নয় বরং ওটাও একটা সাবমেরিন। কারণ বাংলাদেশের বঙ্গোপোসাগরে যে তিমিগুলো আছে,সেটি ছিলো তাদের দ্বিগুন। তারপর তাদের সবমেরিন থেকে অনন্য বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে। অনন্য তাদেরকে একটি শক্তিশালী হেলিকাপ্টার নিয়ে আসতে বলে। তাছাড়া, একটা বড় জালও নিয়ে আসতে বলে; আর তা থাকবে হেলিকাপ্টারের সাথে। তারপর অনন্য তাদের সাবমেরিনের ক্যাপ্টেনকে বলে অনন্য যখন বলবে, তখন একটা বড় ধাক্কা দিয়ে তিমিকে পানির উপর উঠিয়ে দিতে। যখন হেলিকাপ্টারটি ওই যায়গায় পৌঁছায় তখন তারা অনন্যকে বলে যে, তারপর কী করবে?
অনন্য ওদেরকে জালমারার জন্য প্রস্তুত হতে বলে। তারপর অনন্য সাবমেরিনের ক্যাপ্টেনকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে বলে। অনন্য দুই বাহিনীকেই বলে ১, ২, ৩ বলার সাথে সাথে ওদের যে কাজটা করতে বলেছে, সেই কাজটা করতে। তারপর অনন্য ১, ২, ৩ বলে। তার মন মতোই কাজগুলো হয়। তারপর ঐ তিমিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে নিয়ে আসা হয়। অনন্য তখন তিমির গায়ের উপর হাত দিয়ে দেখে, সেটাতে একটা প্লাস্টিকের আবরণ। তখন সেটা সে খুলে ফেলে এবং সে দেখে, এটা আসলেই একটা সাবমেরিন। বিমানবাহিনীর লোকেরা সাবমেরিনের দরজাটা খুলে দেয়। তারপর তারা দেখে যে, ঐখানে ওদের প্রতিবেশ দেশ মায়ানমারের সেনাবাহিনী আর বাংলাদেশের কিছু লোক অবস্থান করছে। আর ঐ লোকরা ছিল তারা, যারা হারিয়ে গিয়েছিল সাগরে। তারপর মায়ানমার সেনাবাহিনীর লোকদের বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি করা হয়।
এই কাজের জন্য বাংলাদেশ সরকার অনন্যকে পুরস্কৃত করে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন