আবার হাঁটবে আলাউদ্দিন, ফুটবে হাসি মুখে
টানাটানির সংসার আলাউদ্দিনের। কখনো ট্রলি, কখনো নছিমন চালিয়ে কোন রকমে দিন কাটত তার৷ কিন্তু বিধি বাম। ২০০৯ সালের একদিন নছিমন চালানো অবস্থায় বড়তাকিয়া এলাকায় শিকার হয় ভয়াবহ দূর্ঘটনার। প্রাণে বেঁচে গেলেও বিকল হয়ে যায় ডান পা; পঙ্গু হয়ে যায় আলাউদ্দিন। এই বিকল পা সুস্থ করতে হলে প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা; প্রয়োজন কয়েক লক্ষ টাকা। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি সে। সংসারই চলে না ঠিকঠাক, চিকিৎসা করাবে কিভাবে? ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ০৮ বছর অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। অনেকে আশার বানী শুনালেও এই পাহাড়সম চিকিৎসা ব্যয়ের ভার নিতে কেউই সম্মত হননি। হাল ছেড়ে দেয় আলাউদ্দিন। মুখের হাসি মিলিয়ে যায় তার, মেনে নেয় আজীবন পঙ্গুত্বের গ্লানি; চির দারিদ্র্য সঙ্গী হয় তার।
২০১৮ সালের ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে "প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদ; মীরসরাই সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়" বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার আয়োজন করে। অন্যান্য অনেকের মত খবর পায় আলাউদ্দিন। মনঃস্থির করে, 'শেষ চেষ্টা; গিয়ে দেখি কিছু হয় কিনা।' চিকিৎসা ক্যম্পে তার অবস্থা দেখে তাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় "প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদ; মীরসরাই সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়" এর সম্মানিত সভাপতি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য জনাব ইসমাইল খানের কাছে। সব শুনে জনাব ইসমাইল খান আস্বস্ত করলেন, আলাউদ্দিনের চিকিৎসায় তিনি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন। পকেট থেকে কার্ড বের করে চট্টগ্রাম মেডিকেল এর সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইকবাল সাহেবকে মেনশন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে বললেন। আশায় বুক বাঁধতে শুরু করল আলাউদ্দিন; ০৮ বছরের পঙ্গুত্ব ঘুচানোর স্বপ্ন উঁকি দিল তার মনে।
কিছুদিন পর আলাউদ্দিন চট্টগ্রাম মেডিকেলে গেল ইসমাইল সাহেবের রেফারেন্স নিয়ে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তার সাহেব নিশ্চিত করলেন, শুধুমাত্র একটা 'টুলস' কিনতে হবে, বাকি সব খরচ মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বহন করবে৷ আলাউদ্দিনের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল; বিশাল এক বোঝা নেমে গেল কাঁধের উপর থেকে। আলাউদ্দিন জানত, ওই 'টুলস' কেনার টাকা তার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব। কয়েকমাসেই প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে সক্ষম হল আলাউদ্দিন।
অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২১.১০.২০১৮ তারিখে চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রফেসর ইকবাল সাহেবের তত্বাবধানে আলাউদ্দিনের ডান পায়ে ০৫ ঘন্টাব্যপী সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের পক্ষ থেকে আলাউদ্দিনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য জনাব সাব্বির আহমেদ শাকিল এবং অপারেশনের জন্য রক্ত দান করেন বিদ্যালয়ের ২০১৭ ব্যাচের ছাত্র তানভীর তুহিন।
আলাউদ্দিন মেডিকেল থেকে ইতিমধ্যে রিলিজ পেয়ে তার কুঁড়েঘরে অবস্থান করছে। একটু একটু হাঁটতে পারছে সে। নিয়মিত চেকআপ চলছে। ডাক্তার সাহেব নিশ্চিত করেছেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আবার আগের মত স্বাভাবিকভাবে হাঁটবে আলাউদ্দিন; ফুটবে তার মুখে পূর্ণ হাসি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন