পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলী এলেন, ‍আমরা পুনরায় শেখলাম

মাষ্টার গিয়াস উদ্দিন
ব্যাচ: ১৯৭৮
বোকামি ও অজ্ঞতার একটা সীমা-পরিসীমা আছে। কিন্তু ওই সীমানা অতিক্রমে আমি যে একেবারে মহাবোকার স্তরে চলে গেছি, তা ভাবতে আমার চরম দুঃখ ও লজ্জা হয়। এইতো সেদিন মীরসরাই সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এ বিদ্যালয়ের সুদীর্ঘ প্রায় চুয়ান্ন বছরের ব্যবধানে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদ একটি দৃষ্টান্তমূলক নব ইতিহাস সৃষ্টি করলো। সেদিন এ পরিষদের উদ্যোগে অত্র বিদ্যালয়ের শুরু  থেকে বিগত ২০১৮ পর্যন্ত যে পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলী মোমবাতি ও ধূপের মতো নিরবে জ্বলে সুবাসিত জ্ঞানের আলোয় হাজারো ছাত্রছাত্রীর সামগ্রিক জীবনটাকে করেছেন পূর্ণিমার চাঁদের অনাবিল কিরণে উদ্ভাসিত, সেই মহান শিক্ষাগুরুজনদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মানসে আয়োজন করা হয়েছিলো শিক্ষক ও স্টাফ সম্মাননা ও স্মরণ সভা। সকাল নয়টার পর থেকে আমাদের প্রাক্তন সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করলেন। যাঁদের অনেককে দেখলে অবাক ও বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। কেউ শারীরিভাবে প্রায় দুর্বল, কেউ বয়সের ভারে চলাফেরায় প্রায় অপারগ। কিন্তু তাঁদের ভেতর লুকিয়ে আছে ২২/২৩ বছরের তরুন-যুবকের সৃষ্টিশীল তারুণ্যের মহাউদ্দীপনা। এটি ছিলো আমার কাছে অবিশ্বাস্য। 

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে অত্র পরিষদের নির্ভরযোগ্য কান্ডারী ও সভাপতি এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ডা. প্রফেসর জনাব ইসমাইল খানের সভাপতিত্বে ও অত্র পরিষদের সুযোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ সাধারণ সম্পাদক বাবু প্রবাল ভৌমিকের দৃষ্টিনন্দিত সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের রীতিনীতি শেষে শুরু হলো আলোচনা ও স্মৃতিচারণ। ওই স্মরণ সভায় আগত সম্মানিত প্রাক্তন শিক্ষকমন্ডলীর প্রায় প্রত্যেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে যা বললেন সে বাক্যগুলো সত্যিই খুব অপূর্ব এবং আমাদের ভবিষ্যত জীবন চলার পথে উদ্দীপনাময় পাথেয়। শিক্ষকতা জীবনে কোন প্রকার সামাজিক বাধা-বিপত্তি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাঁদের কাউকে নিখুঁত কর্তব্য পালনে বিরত রাখতে পারেনি। অর্থাভাবে অনেকেই ছিলেন বটে, কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে জ্ঞানের দীপশিখা প্রজ্বলিত করতে তাঁরা ছিলেন সদা দুরন্ত-দুর্বার। এখনো তাঁদের মধ্যে যে সৃজনশীল চিন্তা-চেতনা এবং তা বাস্তবে পরিনত করার যে উদ্দীপনাময় কর্মস্পৃহা তা দেখে বোঝা গেল আমি স্যারদের ধারেপাশেও যেতে পারিনি। কিন্তু এইটি ভাবতেও পারিনি তাঁদের প্রত্যেকটি বাক্য প্রায় দর্শণতুল্য। অতএব, আমি সেরা বোকা। বুঝতে বাকী রইলো না যে, আমার আজো কিছুই শেখা হয়নি। এ অসহ্য যন্ত্রনা কিভাবে বহন করবো? মীরসরাই সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। 

অপরদিকে, এ পরিষদের সম্মানিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের প্রতি একটি বিশেষ ব্যাপারে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই। তা হলো- আমাদের প্রাণপ্রিয় এ বিদ্যালয় শুধু দেশে-বিদেশে আলোচিত ও সমাদৃত, সরকারি-বেসরকারিসহ নানান শ্রেণি ও পেশায় উজ্জ্বল ব্যক্তিবর্গ জন্ম দেয়নি বরং ১৯৭১ সালে আমাদের মহান রক্তাক্ত স্বধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অত্র বিদ্যালয় থেকে অনেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছেন। সেদিন দুঃসাহসিক সম্মুখ যুদ্ধে কেউ কেউ বীরের মতো লড়াই করে শহীদ হয়েছেন। আমি সবার নাম জানিনা বলে চরম দুঃখিত। তবে এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে মরহুম জনাব আবুল বশর চৌধুরী, জনাব নুরুল আবছার মিয়া, জনাব শামছুল হক, মরহুম জনাব অহিদুর রহমান, জনাব আলাউদ্দিন, মরহুম জনাব নুরুল আবছার, জনাব আবুল হাসেমসহ আরো কেউ কেউ আছেন। সেদিন এ মীরসরাই থানার যুদ্ধকালিন ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ৯নং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব জাফর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তাঁর কাছে এ বিদ্যালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক নামের তালিকা পাওয়া যাবে। 
অতএব, আমি পুনরায় বিনীতভাবে সম্মানিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সদস্যমন্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবিনয়ে নিবেদন করতে চাই, আগামী মার্চ; যা ইতিহাসে যুদ্ধ শুরুর মাস, এ'মাসে এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র যাঁরা হানাদার বাহিনীর কামান-মেশিনগানের সামনে দাঁড়িয়ে বাঙালির বিরল ইতিহাস সৃষ্টির রক্তাক্ত সংগ্রামে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের প্রত্যেককে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলীর মতো সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক। 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

" বিজয় ও অভ্র " ----যাদের কল্যাণে আমরা বাংলায় কথা বলি

মা

প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের পথচলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ